খুলনা অফিস: শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের শাস্তির দাবি জানিয়েছে খুলনার সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগ।
খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শনিবার দুপুর ১টার দিকে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের পক্ষে বক্তব্য দেন ডা. শেখ বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, ‘নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ডিসি ও এসপির উপস্থিতিতে, দুই শতাধিক পুলিশের সামনে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এতে তাদের দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় পাওয়া গেছে। আমরা অবিলম্বে তাদের শাস্তিসহ দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
মৌলবাদীদের হাতে শিক্ষকের লাঞ্ছনা ও নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই তালিকায় শুরুর দিকে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউনুস, ড. এস তাহের এবং ড. রেজাউল করিমরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যা শুরু হয়েছে, তার আগ্রাসন ও ভয়াবহতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়ংকর।’
সংবাদ সম্মেলনে শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়চন্দ্র মণ্ডল, নড়াইলের একটি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জয় সরকার ও উন্মেষ রায়কে যেভাবে নিগৃহীত, লাঞ্ছিত ও অপমান করা হয়েছে, তা একান্তই অনাভিপ্রেত।
‘এ ছাড়া নাস্তিকতার অযৌক্তিক অভিযোগ তুলে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান রতন সিদ্দিকী ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদা হকের বাসায় মৌলবাদীরা আক্রমণ চালায়।’
সাভারের আশুলিয়ার শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে তার নিজের ছাত্র যেভাবে হত্যা করেছে তা বীভৎস ও ভয়ংকর বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘‘এ সব ঘটনায় প্রশাসনের নির্বিকারত্ব আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই স্থানীয় রাজনীতি আর প্রশাসনের পরোক্ষ সহায়তা পরিদৃশ্যমান। যার ফলে সারা দেশেই ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ মুসলমানদের অনুভূতি নিয়ে কতিপয় গোষ্ঠীর অসহিষ্ণুতা বিস্তারের অপচেষ্টা ভয়ংকর আকার ধারণ করছে।’’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন সর্বভৌম দেশে এটা চলতে পারে না। এই অবস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী দেশের পবিত্র সংবিধানের পরিপন্থী। এ ছাড়া এই পরিস্থিতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও একেবারেই বিপরীত। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের এই অবমাননায় আমরা খুলনার সব শ্রেণি-পেশার মানুষসহ নাগরিক সমাজ মর্মাহত,
উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।
‘কেননা বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নে যে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের অঙ্গীকার করেছে, ধারাবাহিকভাবে এসব সাম্প্রদায়িক আক্রমণে তার ব্যত্যয় ঘটছে, যা রাষ্ট্র কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না।’
ক্ষমতায় থাকা দলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘মৌলবাদীদের মূলোৎপাটন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করে, দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু- এ ধরনের কোনো বিধান বাঙালি জাতিরাষ্ট্রে অনাদর্শিক ও অসাংবিধানিক। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্র কঠোর হাতে দমন করুক।
‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় পদক্ষেপে দেশের নাগরিকরা অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে স্বস্তিতে বসবাসের পরিবেশ পাবে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে যে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, আমরা মনে করি, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা চিরতরে নির্মূল করতেও তিনি সেরূপ দৃঢ়তার পরিচয় দেবেন। রাষ্ট্র অনেক শক্তিশালী একটি কাঠামো, তার সরকার চাইলে সবই সম্ভব।’